ঢাকা থেকে মংলার পথে . . .

© Monirul Alam


২৩/০৮/২০১১

টেনশন ! যানজটের খপ্পরে পরে যদি গাড়ী মিস করি তাই অনেক আগেই বাসা থেকে বের হলাম- যদিও এর মধ্যে আবার অফিস থেকে ল্যাপটপ নিতে হবে৷ তাই আগে আগে বের হওয়াই ভালো৷ লক্ষীবাজার থেকে কারওয়ান বাজার হয়ে গাবতলী তাই নো রিকস -দুই ঘন্টা আগে গিয়ে বাস র্ষ্টান্ডে বসে থাকা অনেক ভালো৷

যেতে হবে খুলনা বিভাগের বাগেরহাটের মংলাপোর্ট-এ৷ ট্রানজিট ইস্যু নিয়ে আমাদের পত্রিকা ( প্রথম আলো) সরজমিন প্রতিবেদন ছাপা হবে-চার পাতার বিশেষ এ সংখ্যাটি মূল গুরুত্বে জায়গা হলো ট্রানজিট ইসু্তে বাংলাদেশ কতটুকু প্রস্তুত তাই সরজমিনে দেখে আসা এ বিষয় নিয়ে ইতি মধ্যে পত্র-পত্রিকার লেখালেখি হচ্ছে।

আগামী ছয় সেপ্টেম্বর-এ ভারতের প্রধান মন্ত্রী মন মহোনসিং ঢাকা আসছেন ভারত বাংলদেশ ট্রানজিট, তিস্তার পানি বন্টন সহ বিভিন্ন গুরুত্ব পুণ ইসু নিয়ে আলোচনা হবে ৷চট্টগ্রাম এবং মংলা বন্দরটি সেই দিক থেকে বিশেষ গুরচ্ত্ব বহন করে৷ মংলা বন্দর এবং আশেপাশের সড়ক গুলোর কি অবস্থা সেই বিষয় গুলো সম্পর্কে খোজ খবর নেওয়া৷

সঙ্গে আছেন আমাদের বানিজ্য বিট করেন সিনিয়র রিপোটার কাজল ভাই৷ উনি উত্তরা থেকে গাবতলী বাস ষ্ট্যাড আসবেন৷ সোহাগ পরিবহনের নন এসি গাড়ীতে আমরা খুলনা যাব৷ গাড়ী ছাড়ার সময় দুপুর সোয়া দুইটায়৷

যথা সময়ের আগেই গাবতলী বাস ষ্ট্যান্ড এ এসে বসে আছি৷ অপেক্ষা করতে করতে দুইজন ফটোসাংবাদিক এর সাথে দেখা হয়ে গেল৷ সকালের খবরের আহাদ, আর ডেইলি ষ্টার এর সুমন, ওরা এসেছে অগ্রীম টিকিট সং্ক্রান্ত অ্যাসাইমেন্ট-এ৷ একে একে সবাই বিদায় নিলেন আর ইতিমধ্যে চলে এলেন কাজল ভাই৷ আমাদের গাড়ী আড়াইটা নাগাদ যাত্রা শুরু করলো- শুরুতেই গলদ৷

ঠেলা মারো হেইয়ো আরো জোড়ে হেইয়ো- গাড়ীটিকে এভাবেই র্ষ্টাট নিতে হলো৷ দীর্ঘ পথের এই জার্নিতে যদি শুরুটা এই হয় তাহলে শেষটা যে কি হবে ! তবু তো গাড়ীর টিকেটটি পাওয়া গেল যাত্রা পথের কথা তথইবচো৷

গাড়ীর সীটের কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না৷ এক জন যাত্রী বাসে উঠে- তার সীটটির একটু হেলালোর চেস্টা করলেন- রীতিমতো যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল শেষমেশ ব্যর্থ-গাড়ীর সুপারভাইজার কে ডেকেও কোন ফল হলো না৷ তারপরও এই গাড়ী এক মাত্র ভরসা৷

গাড়ী চলতে শুরু করলো- একটু পর আমি আমার সীট থেকে উঠে গিয়ে, গাড়ীর চালকের পাশে গিয়ে দাড়ালাম উদ্দেশ্যে গাড়ীটির চালককে দেখা- আর ওভার টেকিং এবং ঢাকা-আরিচা সড়কের বাক গুলো পর্যবেক্ষণ করা- সেই সাথে ছবি তোলা৷

গাড়ীর চালকটি মধ্যে বয়সী দেখলেই বোঝা যায় অভিজ্ঞতার ছাপ ষ্টপ্ট৷ সময়ের গতির সাথে পাল্লা দিয়ে গাড়ী চালাচ্ছেন৷ আমি আমার ক্যামেরাটি নিয়ে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে -তারপর তার পাশের সীটে বসে রাস্তা দেখতে লাগলাম। আমি দেখতে পাই ইতিমধ্যে বেশ কিছু গাড়ী ওভারটেকিং করছে যার যার ইচ্ছা অনুযাযী। যেন কারো কিছুই বলার নেই।

সাভারের রাস্তায় দেখলাম একটি তেলবাহী লড়ি আর একটা তেলবাহী লড়িকে ওভারটেকিং করলো৷ আমি মনে মনে ভাবলাম তেলবাহী গাড়ীতো কখনো ওভারটেকিং করতে পারে না৷ কিস্তুু আমাদের দেশে এটাও সম্ভব৷

© Monirul Alam


এই গাড়ীটি যদি ওভারটেকিং করতে গিয়ে দূর্ঘটনার শিকার হয় তাহলে কি হবে ! কিন্তু আমরা দিব্যি সেটা করে যাচ্ছি৷ আমার খুব জানতে ইচ্ছা হলো লড়ির ড্রাইভার গাড়ী চালানোর পুরো নিয়ম কানুন তার জানা আছে কি না?

ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে শুধু বাক আর বাক- বিপরীত দিকে থেকে একটা গাড়ী আসলে পাসিং এর সময় সর্তক না হলে- সমূহ বিদপ মানে দুই চালককে সাবধানী হতে হবে৷ ঢাকা-মানিকগঞ্জ সড়কে এরকম অসংখ্যা বাক চোখে পড়লো৷

© Monirul Alam

গত ১৫ আগষ্ট,২০১১ (প্রথম আলো) অরুপ দার এর প্রতিবেদনে জানা যায় ঢাকা- আরিচা মহাসড়কে ঝুকিপূণ বাকের সংখ্যা প্রায় বাইশটি। ইতি মধ্যেই তা টের পেলাম।যেতে যেতেই নানা আকাড়ের বাক চোখে পড়লো যা রীতিমতো ভয়ন্কর।

আমাদের গাড়ীটি একটি ট্রাককে ওভারটেকিং করতে গিয়ে রাস্তা পারাপরের জন্য দাড়িয়ে থাকা একটি কুকুর প্রায় চাপা দিতে দিতে অবশেষে রক্ষা পেলে অবোধ এই প্রাণীটি৷ ট্রাক এবং বাস এর মাঝ খানে পরে বেচারা প্রাণীটির কি অবস্থা হয়েছিল তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না৷

© Monirul Alam

তবে দুই চালকেরই প্রাণপণ ইচ্ছা ছিল প্রাণীটিকে বাচানোর৷ তাই সে যাত্রায় সে বেচে গেল। আমি ভাবলাম এই পরিস্থিতি যদি এক জন মানুষের ক্ষেত্রে হতো তা হলে- ভাবতেই গা শিউরে উঠে৷

সরকারি হিসাব মতে, সড়ক দূরঘটনায় প্রতি বছর তিন হাজারেরও বেশি লোক মারা যায় আর বেসরকারি হিসাবে প্রায় বারো হাজার থেকে বিশ হাজার্ যা খুবই উদ্বেগ এর বিষয়।অথচ আমাদের রয়েছে একটি সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল যা প্রায় নিষ্ত্রিয় আর সরকারও এ বিষয়ে উদাসীন- তাই বছরের পর বছর ঘটে চলছে এই সড়ক মৃত্যু।

মনে পরে যায় গত তেরই আগস্ট এই সড়কেই নিহত হয়েছেন মিশুক মুনির, তারেক মাসুদ সহো তাদর আরো তিন জন সহকমর্ী মারাত্বক ভাবে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ঢালী আল মামুন৷ ভাগ্য ভালো থাকায় বেচে গেছেন ক্যাথেরিন মাসুদ, ঢালী আল মামুনের স্ত্রী জলি৷

অনেক অনেক বাস্তব অভিজ্ঞতা নিয়ে অবশেষে আমাদের গাড়ী পাটুরিয়া ফেরী ঘাটে এস পৌছালো৷ এখানে খুব একটা যানজট চোখে পড়লো না খুব দ্রম্নতই ফেরিতে উঠে পড়লাম৷ ফেরি পার হতে এক থেকে দেড় ঘন্টা লাগবে৷

পদ্না নদী দিয়ে আমাদরে ফেরি চলতে শুরু করলো৷ পদ্না বিস্তৃণ রুপ দেখে মনটাই ভালো হয়ে গেল- যতো দূর চোখ যায় বিশাল জলরাশি৷ মাছ ধরার ছোট ছোট নৌকা গুলো এদিক সেদিক ঘোরা ফেরা করছে৷ তখন সন্ধ্যা হয় হয় সবারই যেন বাড়ী ফেরার একটা তাড়া- অনেক দূরে দেখলাম জেগে থাকা চরে রাখালের দল তাদের গরুগুলোকে ঘাস খাওযানোর পর বাড়ী নিয়ে যাচ্ছে৷

© Monirul Alam

দলে দলে গরু গুলো পদ্না পানিতে ঝাপিয়ে পড়ছে৷ ফেরির উপরে উঠে এই দৃশ্য দেখলাম আর ছবি তুল্লাম- সেই সাথে কিছু ছবি অফিসে পাঠালাম নেট ব্যবহার করে৷ এ সব করতে করতেই আমাদের ফেরী এপারের গোয়ালন্দ ঘাটে এসে পেীছালো আবার শুরু হলো আমাদের বাস যাত্রা৷ রাজবাড়ীর কোন এক জায়গাতে ইফতারের জন্য বিরতি দেওয়া হলো আমরা নেমে একটি হোটেলে ইফতার করার জন্য বসলাম ৷

রাজবাড়ী থেকেই শুরু হলো খারাপ রাস্তা শুধু ঝাকুনি আর ঝাকুনি এটা চলতে থাকলো পুরো যশোর রোড যদিও এই যশোর রোডের একটা ঐতিহাসিক একটা ভ্যালু আছে আমার মনে পরে যায় মাকিন কবি এ্যালেন গ্রীজবাগের সেই বিখ্যাত কবিতা “সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড” যদিও ভারত প্রবেশের পশ্চিম অংশের রাস্তাটি নিয়ে লেখা। যেখানে ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের শরনাথীরা খোলা আকাশের নিচে পাকসেনাদের হাত থেকে জীবন বাচাতে আশ্রয় নিয়েছিল এ পটভুমিকায় কবিতাটি লেখা হযেছিল।আজ সেই যশোর রোডের একি অবস্থা শুনেছি ও পারের সড়কটি আগের মতোই আছে। এসব ভাবতে ভাবতেই শেষ পর্যন্ত খুলনায় গিয়ে কিছুটা রাস্তা ভালো পেলাম৷

রাত প্রায় বারোটা খুলনা শহরে এসে পেীছলাম৷ চারিদিকে নিরবতা দূর পাল্লার কয়েকটি বাস থামানো রয়েছে৷ না কোন রিকশা নিতে হলো না- বাস কাউন্টার এর পাশেই আমাদের হোটেল৷ হোটেলটির নাম নিউ হোটেল টাইগার গার্ডেন স্থানটির নাম শীববাড়ী মোড়, খুলনা৷ বাস জার্নির ধকল আর অসহনীয় ঝাকির কারণে প্রচন্ড ক্ষুধা তাই সবার আগে পেটে কিছু পরা দরকার৷ হোটেল রিসিপশনে জিজ্ঞেস করি এখানে খাবরের কোন হোটেল আছে কিনা ওরা বলে আমাদরই আছে তবে একটু সময় লাগবে৷ আমরা বলি আশেপাশের কোন খাবারের হোটেলের কথা বলুন৷ ওরা বলে হোটেল থেকে বেরিয়ে একটু এগোলেই সাদ্দাম হোটেল আসে ওটা সারা রাত খোলা থাকে৷

ভাত, গরুর মাংস ভুনা, সবজি আর ডাল দিয়ে দুইজনেই গোঘ্রাসে খেতে থাকি- ক্ষুধা পেটে খেতে খুবই সুস্বাদু লাগে৷ তৃপ্তি নিয়ে খেয়ে আমরা হোটেলে ফিরে যাই কারণ পরের দিন খুব সকালেই মংলা যেতে হবে৷ চারতলার হোটেল রুমের ৫১৫ নম্বর কক্ষে ততোক্ষনে শরীর এলিয়ে দিয়ে ঘুম৷

২৪/০৮/২০১১

সকাল নয়টার দিকে মংলার উদ্দেশ্যে রওনা করালাম৷ খুলনা থেকে মংলা যেতে তেতালিস্নশ কিলোমিটারের সড়ক৷ মাইক্রোবাসে যেতে প্রায় এক ঘন্টা লাগে৷ রচ্পসা ব্রীজ এর কাছে এসে মাইক্রোটি থামতে বলস্নাম, এখান থেকে ব্রীজ এর চমত্কার ভিউ পাওয়া যায় সেই সাথে সড়কটি বেশ প্রসসত্ম৷ বেশ কিছু ছবি তুলস্নাম৷

আমাদের মংলা প্রতিনিধি সুমেল প্রয়োজনীয় সব ব্যাবস্থা করে রেখেছেন আমরা সেই অনুযাযী কাজ করে যাবো৷ স্থানীয় প্রশাসনের সাথে কথা বলা ছবি তোলা এবং বন্দরে দেখার জন্য অনুমতি নেওয়া৷

মংলা শুধু মাত্র বন্দর এর জন্য পরিচিত নয় আরো একটা পরিচিতির কারণ হলো এই মংলা দিয়েই সুন্দরবন কচিখালি, কটকা সহো অন্যান্য এলাকা গুলোতে যাওয়া সহজ ৷ সারা বছরই পর্যটকরা এখানে আসেন বেড়াতে৷

© Monirul Alam

শীত মেীসুমে পযটকদের আনাগোনা অনেক বেশী থাকে৷

বন্দর এর ভিতরে প্রবেশ করলাম৷ একটা ক্রেন এর ব্যাবস্থা করতে বলেছিলাম উপর থেকে ছবি তোলার জন্য৷ সুমেল ভাই সেই ব্যাবস্থা করে রেখেছিলেন৷ এতে করে একটা ভালো ছবি তোলা যাবে৷

ত্রেুন চালক শহীদ ভাই আমাদের কে বিভিন্ন ভাবে সহোযোগীতা করলেন৷ আমি জিজ্ঞস করলাম এই ত্রেুনটার উচ্চতা কত টুকু সে বল্লো ৪৩ফিট প্রায় চারতলা একটা বাড়ীর সমান উচ্চতা৷ যদিও জেটিতে বড় কোন জাহাজ ছিল না- বেশ কিছু দিন আগে আসা অসখ্ প্রাইভেট কার দেখলাম বন্দর এলাকায় পার্ক করা আছে ছাড়া পাবার অনুমতির অপেক্ষায় দিন গুনছে৷ মংলা নদী এবং বন্দরকে কেন্দ্র করে ছবি তোলা হলো বন্দরটি ভিবিন্ন স্থান ঘুওে দেখা হলো এর মধ্যেই দুপুর গড়িয়ে বিকেল৷

কাজ শেষ করে বন্দর থেকে বেড়িয়ে পড়লাম৷ একটু পরেই শুরু হলো বৃষ্টি যদিও বৃষ্টি খুব বেশী সময় ছিল না৷ কাজ শেষ করে পর্যটনের হোটেলে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম৷ সাদা ভাত, কোরাল মাছ সঙ্গে ডাল আর সবজি৷ পাচ জনে বিল প্রায় বারোশ টাকা হলো৷ খাবার শেষ করে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমাদরে মাইক্রো বাসটি আবার খুলনার দিকে যাত্রা শুরু করলো৷ সড়কের দুই পাশে চিংড়ির ঘের নজের পড়ল আরো কিছু ছবি তুল্লাম৷ মাইত্রেচ্াবাসটি যাওয়া-আসা মিলে দুই হাজার টাকা ভাড়া বাবদ দেওয়া হলো৷ হোটেল ফিরতে ফিরতে প্র্ায় সন্ধ্যা হয়ে এলো আর একটু পরই আযান দেবে সবাই ইফতার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো৷ আমাকে ঢাকায় ছবি পাঠাতে হবে ল্যাবটপ অন করে ছবি ডাউন লোড করে পাঠানো শুরু করলাম৷ এখানে সিটিসেল এর নেট ভালো কাজ করে৷ ছবি পাঠাতে কোন রকম অসুবিধা হলো না৷

সাতক্ষীরা মিষ্টান ভান্ডর দই আর গুড়ের ছানা খেলাম ৷ খেতে সুসাধু কিন্তুু আমার আবার ডায়াবেটিস তাই মিষ্টি বিষয়ক খাবার সম্পর্েক একটু সংযত৷

২৫/০৮/২০১১

আজ ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হবো৷ এবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি ট্রেনে করে যাবো৷ কারণ বাসে কওে এসে অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে-বিশেষ কওে সড়ক গুলো যে অবস্থা তাতে গাড়ী চলাচলের আর উপযোগীতা নেই বলেস্নই চলে৷ লক্কড় ঝক্কও মার্কা গাড়ী তার উপর আবার পিছনের সীটে বসে থাকলে যে অভিজ্ঞতা হয় তা ভুক্তভুগিরাই যানেন৷

ট্রেন ছাড়বে রাত আটটায় আমাদওে হোটেল ছেড়ে দিতে হবে বারোটার মধ্যে তাই ঠিক করলাম বাকি সময়টা আশেপাশে ঘুড়ে কাটিয়ে দিব৷ আর কিছু কাজও আছে৷ কিন্তুু শুরম্ন হলো বৃষ্টি তাই প্রথম আলো বুরো অফিসেই বসে থাকলে হলো৷ কথা হলো আমাদেও বুরো অফিসের শেখ আবু হাসান, ডুমুরিয়া প্রতিনিধি কাজী আবদুল্লা ভাই এবং নতুন সংবাদ কমী সুমন্তর সাথে সবাই প্রাণবন্ত৷ বিকেল নাগাদ একে একে সবাই বিদায় নিলেন থাকলেন সুমত্ম, আমি আর কাজল ভাই৷

বিকেল নাগাদ বৃষ্টি কমলে ইফতার কিনতে বের হলাম৷ ইফতার করেই ট্রেন ষ্টেশন যাবো৷ হোটেল টাইগার গার্ডেন থেকে ইফতার কিনে ফিওে এলাম৷ এখন শুধু অপেৰা ট্রেন ষ্টেশন পেীছানোর৷

খুলনা ট্রেন ষ্টেশন যেন আলো আধারের খেলা একটু পরপরই বিদ্যুত চলে যাচ্ছে৷ এর মধ্যেই যাত্রীদের ব্যস্ততা আর লাল শার্ট পরা কুলিদের হাকডাক- ছিন্নমূল মানুষের বিক্ষিপ্ত ঘোরাফেরা সব মিলে এই ষ্টেশনটা একটু যেন অন্য রকম ব্যস্ততা এ সব দেখতে দেখতে আমাদের সুন্দরবন নামের ট্রেনটি এক নম্বর প্লাটফর্ম এ চলে এলো যাত্রীরা মালামাল সহো উঠতে লাগলেন৷ মনে মনে যেন একটা প্রশান্তি নেমে এলো তাহলে সময় মতো ঢাকা পেীছানো যাবে৷ নিজেদের সীট খুজে মালামাল রেখে নিশ্চিন্ত হলাম- এখন বসে বসে ট্রেন ছেড়ে দেবার অপেৰায়৷

ঘড়ির কাটা তখন আট ক্রস করে নয়টা অতপর দশটা বাজে ট্রেনটি ধীরে ধীরে ষ্টেশন ছাড়তে শুরু করে এতো পরে ট্রেন ছাড়ার হেতু জানা গেল- ট্রেন এর এসি কাজ করছিলনা সেটা মেরামত করার জন্যই এই দেড়ী হওয়া৷ মনে মনে ভাবলাম এভাবেই আমাদের সরকারের প্রতিটি সেক্টর চলছে কোন জবাব দিহিতা নেই৷ মনে মনে ভাবতে লাগলাম আটটার ট্রেন ঢাকাতে পেীছতে কয়টা বাজবে সেটাই এখন দেখার বিষয়- কারণ এই ট্রেনটি খুব সম্ভবতো সবচেয়ে লং জার্নি খুলনা, যশোর, কুষ্টিয়া,চুয়াডাঙ্গা, ইশ্বরদী, সিরারগঞ্জ, টাঙ্গাইল সহ মোট দশটি জেলা ঘুরে তবেই ঢাকা গিয়ে পেীছবে৷

অন্ধকার ভেদ করে আমাদের ট্রেনটি সামনের দিকে ছুটে চলছে কখনো গতি বাড়িয়ে আবার কখানো গতি কমিয়ে মাঝে মাঝে কোন কোন ষ্টেশন ধরছে তারপর আবার চলতে শুরু করে আর এর মাঝেই কথা হয় পাশের সিটে বসা এক যাত্রীর সাথে- জাহিদ নামের এই যাত্রী বলেন, আমি এই ট্রেনে নিয়মিত যাতায়ত করি এটি ঢাকা পৌছতে প্রায় বারো ঘন্টা লাগবে আর যদি সমস্যা হয় তখনতো আর সময়ের হিসেব থাকে না৷ ট্রেন এর এক কর্মী ক্যান্টিন বয় এসে বলেন, স্যার সেহেরি খেযে নেন, খাবারের বস্ক খুলে দেখি ভাত, খাসির মাংস আর সবজি সীটে বসেই খেতে হবে ক্যান্টিন এ যাবার কোন উপায় নেই কারণ আমরা ইঞ্জিন এর সাথে লাগোয়া বগিতে বসেছি৷ ইতি মধ্যে অনেকই তাদের নিজেদের সাথে নিয়ে আসা খাবার খাচ্ছেন৷ ট্রেনের ঝিক ঝিক শব্দ আর দুলুণির মধ্যেই খাবার শেষ করলাম৷

আমার নিজের ঘুম আসার কোন সুযোগ নেই- কারণ কোন জার্নিনে আমি পারত পক্ষে ঘুমাই না- জানালা দিয়ে বাহিরের দৃশ্য দেখতে খুব ভালো লাগে আমি অবিরাম দেখতে থাকি মাঝে মধ্যে সেই সব দৃশ্য আমার ক্যামেরায় ধারণ করি৷

তখন পূর্ব আকাশে সুর্যেও লাল রং ছড়াতে শুরু করেছে আর আমাদের ট্রেন যুমনা ব্রীজ অতিক্রম করছে৷ আমি ছবি তোলার জন্য উঠে পরি ভোরের এই রকম দৃশ্য অনেকটাই বিরল৷ এক দিকে বিশাল যমুনা থৈই থৈই জলরাশি

© Monirul Alam

আর অন্য দিকে ভোরের লাল আলোর পুরো এলাকা যেন এক অর্পাথিব হয়ে উঠে৷ আমি ছবি তুলে চলছি- ট্রেন যমুনা ব্রীজ ধরে এগিয়ে যাচ্ছে প্রতিটি মুহুর্ত যেন বদলে বদলে যাচ্ছে৷ মনে মনে আর একবার উচ্চারণ করি, আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি . . .

অর্পাথিব সেই সময় একটু পরই আমার চোখের সামনে থেকে মিলিয়ে যায়- শুধু সেই মহুর্তের কিছু খন্ড চিত্র স্থির হয়ে থাকে আমার ক্যামেরায়৷ নিজের সীটে এসে চুপচাপ বসে থাকি একটু আগের সেই অনুভুতি নিয়ে৷ কাজল ভাই বলেন, মনির ভাই- ছবি তোলা হলো আমি মৃদু হেসে মাথা ঝাকাই ৷

ট্রেন তখন টাঙ্গাইল ছেড়ে জয়দেবপুরের দিকে এগিয়ে চলছে৷ একটু যেন ঝিমুনি আসে কিস্তুু সেটাকে পাত্তা দেই না- কামরার অন্যান্য যাত্রীদের দেখি অনেকই গভির ঘুমে আচ্ছন্ন৷ ট্রেনের বন্ধ অসচ্ছ জানালা দিয়ে দেখার চেস্টা করি বাহিরের দৃশ্য কিন্তুু বোঝা যায় না কিছুই৷ আবারও উঠে পরি সীট থেকে বগির দরজার পাশে এসে দাড়িয়ে দেখতে থাকি সেই পরিচিত দৃশ্য দুই পাশে সবুজ আর সবুজ সেই সবুজকে পিছনে ফেলে ট্রেনটি সামনের দিকে এড়িয়ে যাচ্ছে৷

এয়ার পোর্ট ষ্টেশন ট্রেনটি থামার সাথে সাথে বেশ কিছু যাত্রী উঠে পরেন মালামাল নিয়ে- এক বৃদ্ধর সাথে কথা হয়, কমলাপুর থেকে এতো ভীড়ের মধ্যে ট্রেনে উঠা তাদের জন্য কষ্ট হয়ে যাবে- তাই এই বিকল্প ব্যাবস্থা আগে ভাগেই এভাবে উঠে পড়েছেন৷ মেয়ে অষ্ট্রেলিয়াতে যাবে তাকে বিদায় দিতে ঢাকা এসেছিলেন তার বড় ছেলে আর্মিতে মেজর পদে আছেন- ছেলের বউ এবং পরিবারের অন্যান্যদের নিয়ে বাড়ী ফিরছেন এই বৃদ্ধ৷ বাসে করে বাড়ী যাবার ঝুকি নেননি তাই ট্রেনে কওে বাড়ী ফিরছেন তার দেশের বাড়ী পাবনাতে সেখানেই সবাই মিলে ঈদ পালন করবেন৷ একটু পরেই দেখা গেল তার ছেলেকে একটা বড় লাগেজ গুছিয়ে রাখছেন-আমাকে দেখিয়ে বল্লেন আমার ছেলে৷ মানুষের ভীড়ে আর তাড়াহুড়োর কারণে তার পুরো পরিবারটিকে দেখার সুযোগ হলো না৷ ভালো লাগলো বাবা ছেলের গভীর ভালোবাসার এবং শ্রদ্ধার সম্পর্ক আজকাল খুব একটা চোখে পড়ে না৷

ইতি মধ্যেই কাজল ভাই এয়ারপোর্ট ষ্টেশন নেমে গেছেন তার বাড়ী এই এলাকাতেই আমি নামবো কমলাপুর ষ্টেশনে৷ আমাকে আরো আধা ঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে৷ আমি তখন হিসাব মেলাতে ব্যস্ত এই ট্রেন যাত্রাতে কতক্ষণ সময় লাগলো হিসেব কষে দেখলাম মোট সময় লেগেছে তেরো ঘন্টা৷

ট্রেনটি কমলাপুর ষ্টেশন টাচ করা মাত্রই কুলিদের একটা দল বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন বগিতে প্রবেশ করতে লাগলো যাত্রীদের মালামাল ক্যারি করার জন্য৷ আমি ভীড় ঠেলে সঙ্গে থাকা ব্যাগটি নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাই- কমলাপুর ষ্টেশনটি ত্যাগ করার পুর্বে আমাদের বহনকারী থেমে থাকা সুন্দরবন ট্রেনটির দিকে আর একবার তাকাই- অন্যান্য যাত্রীরা ইতিমধ্যে উঠতে শুরু করেছে একটু পরেই ট্রেনটি নতুন যাত্রীদের নিয়ে খুলনা উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করবে৷

আর দুই দিন পরই ঈদ-উল ফিতর নগরবাসী তাদের প্রিয় জনের সাথে ঈদ পালন করতে দেশের বাড়ী ফিরছেন ৷ আমাকেউ বাসায় ফিরতে হবে বাসায় একটু রেষ্ট নিয়ে আবার অফিসে যেতে হবে_ ছবি গুলো জমা দিতে হবে এর মধ্যেই আমাদের ভারত-বাংলাদেশ ট্রানজিট ইস্যুর উপর বিশেষ সংখ্যাটি বের হবে ঈদের পর পর . . .

ঈদ এ বাড়ী যাওয়া . . .

ভোর ছয়টায় এয়ার পোট রেল শ্টেশনে পৌছালাম। শত শত মানুষ অপেক্ষা করছে ট্রেন এর জন্য- অবশেষে সেই চুড়ান্ত মুহুত কার আগে কে উঠবে সেই
নিয়ে তীব্র প্রতিযোগীতা। জীবনের ঝুকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে উঠে বাড়ীর উদ্দেশ্যে যাত্রা- প্রিয় জনের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগী এই আমাদের বাঙ্গালীর চিরায়ত
জীবন যাপন . . .